১ থেকে ৩৬ পর্যন্ত মৌলের পর্যায় সারণি তৈরি ও রং দিয়ে চিহ্নিত করণ: শিক্ষার্থী বন্ধুরা কেমন আছো সবাই। তোমাদের জন্য আজকে নিয়ে এলাম নবম শ্রেণির রসায়ন বিশ্বের চতুর্থ অধ্যায় পর্যায় সারণি থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আজকে আমরা ১ থেকে ৩৬ পর্যন্ত মৌলের পর্যায় সারণি তৈরি ও রং দিয়ে চিহ্নিত করণ এর মাধ্যমে ক্ষার, মৃৎক্ষার ধাতু, মুদ্রা ধাতু, হ্যালোজেন, নিষ্ক্রিয় গ্যাস ও অবস্থান্তর ধাতু সমূহ চিহ্নিত করা দেখবো।
পর্যায় সারণি:
২০১৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে মোট ১১৮ টি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছে। রসায়ন অধ্যায়ন গবেষণার জন্য সবকটি মৌলের ভৌত রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে ধারণা থাকা একজন শিক্ষার্থীর জন্য অবশ্য।
মৌলিক পদার্থ গুলোর মধ্যে কিছু কিছু মৌলিক পদার্থ একই রকম ধর্ম প্রদর্শন করে।
যে সকল মৌলিক পদার্থ একই রকম ধর্ম প্রদর্শন করে তাদেরকে একই গ্রুপে রেখে সমগ্র মৌলিক পদার্থের জন্য একটি ছক তৈরি করার চেষ্টা দীর্ঘদিন থেকেই চলছিল।
কয়েক শত বছর ধরে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর প্রচেষ্টা, অনেক পরিবর্তন, পরিবর্তনের ফলে আমরা মৌলগুলো সাজানোর একটি ছক পেয়েছি যেটা পর্যায় সারণির বা পিরিয়ডিক টেবিল নামে পরিচিত।
১ থেকে ৩৬ পর্যন্ত মৌলের পর্যায় সারণি তৈরি ও রং দিয়ে চিহ্নিত করণ:
আমরা প্রথমেই তোমাদের জন্য একটি পর্যায় সারণি তৈরি করব এবং সেখান থেকে ৩৬ টি মৌল বিশিষ্ট পর্যায় সারণি তে বিভিন্ন রং এর মাধ্যমে ধাতু গুলি চিহ্নিত করে নিব।
আজকের এই আলোচনা থেকে তোমরা নবম শ্রেণির রসায়ন বিষয়ের চতুর্থঅধ্যায় পর্যায় সারণি থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর করতে পারবে এবং ১ থেকে ৩৬ পর্যন্ত মৌল বিশিষ্ট পর্যায় সারণি তৈরি করতে পারবে।
তৈরিকৃত পর্যায় সারণিতে বিভিন্ন রং এর মাধ্যমে ক্ষার ধাতু, মৃৎক্ষার ধাতু, মুদ্রা ধাতু, হ্যালোজেন, নিষ্ক্রিয় গ্যাস, অবস্থান্তর ধাতু সমূহ চিহ্নিত করা যাবে।
চলো প্রথমেই আমরা ১ থেকে ৩৬ পর্যন্ত মৌলের পর্যায় সারণি তৈরি করি এবং নিচের ছবিতে তা লক্ষ্য করো:
পর্যায় সারণিতে মৌল চিহ্নিত করণ:
ক্ষার ধাতু:
সারণিতে পিংক কালারে চিহ্নিত মৌলগুলোর নাম ক্ষার ধাতু। পর্যায় সারণির ১ নং গ্রুপে ৭ টি মৌল আছে।
এদের মধ্যে হাইড্রোজেন ছাড়া বাকি দুটি মৌলকে (লিথিয়াম, সােডিয়াম, পটাশিয়াম, রুবিডিয়াম, সিজিয়াম এবং ফ্রানসিয়াম) ক্ষারধাতু বলে।
এই ছয়টি মৌলের প্রত্যেকটি পানিতে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস এবং ক্ষার তৈরি করে বলে এদেরকে ক্ষারধাতু (Alkali Metals) বলা হয়।
মৃৎক্ষার ধাতু:
হলুদ রং দিয়ে চিহ্নিত মৌলগুলোর নাম মৃৎক্ষার ধাতু।
পর্যায় সারণির ২ নং গ্রুপে বেরিলিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, স্ট্রনসিয়াম, বেরিয়াম এবং রেডিয়াম এই ৫টি মৌল আছে। এই মৌলগুলােকে মৃৎক্ষার ধাতু বলে।
এই ধাতুগুলােকে মাটিতে। বিভিন্ন যৌগ হিসেবে পাওয়া যায়। আবার, এরা ক্ষার তৈরি করে। এজন্য সামগ্রিকভাবে এদের মৃৎক্ষার। ধাতু (Alkaline Earth Metals) বলা হয়।
মুদ্রা ধাতু:
মেরুন রং দিয়ে চিহ্নিত মৌল গুলোর নাম মুদ্রা ধাতু। গ্রুপ-১১ এর ৭টি মৌল হচ্ছে কপার, সিলভার, গােল্ড এবং রন্টজেনিয়াম৷ এই চারটি মৌলের।
মধ্যে প্রথম ৩ টি মৌলকে মুদ্রা ধাতু (Coin Metals) বলা হয়, কারণ এই গ্রুপের সবচেয়ে নিচের মৌল রন্টজেনিয়াম (Rg) ছাড়া অন্য যে ৩ টি মৌল আছে তা দিয়ে প্রাচীনকালে মুদ্রা তৈরি হতাে এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতাে।
হ্যালােজেন গ্রুপ:
সারণিতে নীল রং দিয়ে চিহ্নিত মৌলগুলোর নাম হ্যালোজেন গ্রুপ। গ্রুপ-১৭ এর 6টি মৌলকে হ্যালােজেন (Halogen) বলা হয়।
এই হ্যালােজেন গ্রুপের ৬ টি মৌল হচ্ছে: ফ্লোরিন (F), ক্লোরিন (Cl), ব্রোমিন (Br), আয়ােডিন (I), অ্যাস্টাটিন (As) এবং টেনেসিন (Ts)।
এ সকল হ্যালােজেন মৌলকে X দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
হ্যালােজেন মানে লবণ উৎপাদনকারী এবং এর মূল উৎস সামুদ্রিক লবণ। হ্যালােজেন মৌলগুলাের সাথে ধাতু যুক্ত হয়ে লবণ গঠিত হয়।
যেমন– F এর সাথে Na যুক্ত হয়ে সােডিয়াম ক্লোরাইড লবণ কিংবা cl এর সাথে Na যুক্ত হয়ে সােডিয়াম। ক্লোরাইড (NaCl) বা খাদ্য লবণ গঠিত হয়।
এরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে ইলেকট্রন ভাগাভাগি করে দ্বিমৌল অণু তৈরি করে, যেমন Cl, l, ইত্যাদি।
নিস্ক্রিয় গ্যাস: পর্যায় সারণির ১৮ নং গ্রুপের মৌলসমূহকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস (Inert Gases) বলা হয়।
মৌলগুলাে হলাে: হিলিয়াম (He), নিয়ন (Ne), আর্গন (Ar), ক্রিপ্টন (Kr), জেনন (xe), রেডন (Rn) এবং ওগানেসন (og)
এই মৌলগুলাের সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তরে প্রয়ােজনীয় ইলেকট্রন দিয়ে পূর্ণ।
থাকে বলে এরা ইলেকট্রন বিনিময় বা ভাগাভাগি করে কোনাে যৌগ গঠন করতে চায় না।
রাসায়নিক বন্ধন গঠন বা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এরা নিষ্ক্রিয় থাকে বলে এদেরকে নিষ্ক্রিয় মৌল বা নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে।
নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলাে সাধারণ তাপমাত্রায় গ্যাস হিসেবে থাকে। পর্যায় সারণিতে তা বেগুণি রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পর্যায় সারণির ৩ নং গ্রুপ থেকে ১২ নং গ্রুপের মৌলগুলােকে অবস্থান্তর মৌল বলে।
অবস্থান্তর মৌলগুলাে যে সকল যৌগ গঠন করে সে সকল যৌগ রঙিন হয়। এই অবস্থান্তর মৌল বিভিন্ন বিক্রিয়ার প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
যেমন: ১০ নং গ্রুপের মৌল নিকেল একটি অবস্থান্তর মৌল। নিকেল বিভিন্ন জৈব বিক্রিয়ার প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
আশার করছি তোমরা ১ থেকে ৩৬ পর্যন্ত মৌলের পর্যায় সারণি তৈরি করতে পারবে এবং তোমাদের নবম শ্রেণির রসায়ন বইয়ে ৩য় এস্যাইনমেন্ট তৈরি করতে পারবে।