মনে কর, তুমি শিক্ষা সফরে কোন বিশেষ স্থানে ভ্রমন করতে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে তুমি কোন কোন ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জন করলে তার একটি বিবরণ লিপিবদ্ধ কর।

ভূমিকা:
আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব কেউ দূরে থাকলে তার বাড়িতে ঘুরতে যাওয়া ভ্রমণ হলেও ভ্রমণ মানুষের সুদূর বিলাসী জিনিস। সবাই ভালবাসে সরমর পেরিয়ে মৌলিক হিমালয় জয় করে কৃষ্ণবর্ণ অরণ্যে মশাল জ্বেলে পথ খুঁজে জীবন আজীবন বেড়াতে।
কিন্তু ছোটবেলা থেকে এসে সামান্য পদ ঘুরেছি তাতে আমার মনের সাধ মেটেনি। তাই পায়ে শিকল বাঁধা পাখির মত ছটফট করেছি আর দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বহু বিখ্যাত কবিতাটি বারবার আবৃত্তি করেছি-

“ইচ্ছা সম্যক গমন ভ্রমণে, কিন্তু পাঠের নাস্তি,
পায়ের শিকলি মন উড়ু, উড়ু একই দৈত্যে শান্তি।”

শিক্ষা সফরে ভ্রমণের কৌতুহল:
আমার জীবনে সবে মাত্র ১৪ টি ক্যালেন্ডার অতিক্রান্ত হয়েছে। এরই মাঝে লোকমুখে বর্ণিত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, পাঠ্যপুস্তকে রঙিন ছবি এবং নদনদী পাহাড়-পর্বত সমুদ্র রাজার কাহিনী স্মৃতিস্তম্ভ ঐতিহাসিক উপাদান প্রভৃতি গল্পে মনকে স্থির রাখতে না পেরে যেন বারে বারে এক কল্পনার উদয় ঘটেছে হৃদয়ে।

তারি মাঝে হঠাৎ শিক্ষকদের শিক্ষা সফরে ভ্রমণে যাওয়ার প্রস্তাব যেন উদ্দেশ্যে যেন বাস্তব রূপ নিতে চলেছে। এই কৌতুহলকে বাস্তবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার লক্ষ্যে ভ্রমণ হয়ে উঠেছিল এক অফুরন্ত কৌতুহল।

শিক্ষা সফরে ভ্রমণের স্থান নির্ধারণ:
ভ্রমণের স্থান নির্ধারণ করা ছিল আমাদের কাছে কঠিন একটি কাজ। ইতিহাস স্যারের কাছে ঢাকা সোনারগাঁও এর গল্প শুনে স্যারের প্ররোচনায় এবং অভিভাবকদের মতামত নিয়ে আমরা স্থির করলাম ঢাকার সোনারগাঁও এই আমরা ভ্রমণে যাব। মার্চের ১৭ তারিখে স্থির হল আমাদের ভ্রমণে তারিখ।

শিক্ষা সফরের যাত্রা শুরু:
যথারীতি মার্চের ১৭ তারিখ সকাল সাতটায় আমরা সকলে স্কুল প্রাঙ্গণে উপস্থিত হলাম। সকাল সাড়ে সাতটায় আমাদের বাস রওনা দিল। আমাদের অভিভাবকদেরকে আমরা বিদায় জানালাম এবং খুশিমনে আমাদের গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করলাম।

সোনারগাঁও এর ইতিহাস:
শিল্পকলা সংস্কৃতি ও সাহিত্য সোনারগাঁও ছিল বাংলাদেশের এক গৌরবময় জনপদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত নৈসর্গিক পরিবেশে প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁওয়ে নামটির উদ্ভব ঘটেছে সুবর্ণগ্রাম থেকে।

আবার অনেকের মতে বারোভূঁইয়ার প্রধান ঈশা খাঁ স্ত্রী সোনাবিবির নামে সোনারগাঁও এর নামকরণ করা হয়েছে। আনুমানিক ১২৮৭ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চলে মুসলিম আধিপত্যের সূচনার পর আওরঙ্গজেবের আমলে বাংলার রাজধানী ঢাকা ঘোষণা হওয়ার আগে পর্যন্ত মুসলিম সুলতানের রাজধানী ছিল সোনারগাঁও। যদিও তখন প্রাচীন এ রাজধানীর নাম পানাম নামেই পরিচিত ছিল। বর্তমানে সোনারগাঁও নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা।

সোনারগাঁ গিয়ে যা যা দেখলাম:
সোনারগাঁওয়ে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে অন্যতম হলো লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, জয়নুল আবেদীন স্মৃতি জাদুঘর, পানাম সিটি ও বাংলার তাজমহল। বাংলার তাজমহল ছাড়া বাকি জায়গা গুলো খুবই কাছাকাছি।

কেন বিখ্যাত: প্রাচীন বাংলার বিখ্যাত জনপদ সহস্রা বছরের ইতিহাস হল সোনারগাঁ। বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজধানীর নাম সোনারগাঁ।

সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর এর জন্য বিখ্যাত। এখানে উৎপাদিত মসলিন কাপড় একসময় গোটা বিশ্বে বিখ্যাত ছিল। এই কাপড় এত সূক্ষ্ম সুতার তৈরি হতো যে মসলিনের তৈরি একটি বড় ধরনের চাদর দিয়াশলাইয়ের প্যাকেটে ঢুকিয়ে রাখা যেত। সোনারগাঁর গৌরব আরো অনেক কারণে। ইতিহাস থেকে জানা যায় সোনারগাঁ যখন শহর ছিল তখন ঢাকা ছিল গ্রাম। আর ঢাকা যখন শহর হলো তখনও কলকাতা ছিল গ্রাম।

উপসংহার:
সোনারগাঁও হল আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজধানীর নাম হল সোনারগাঁও।