সভ্যতার ইতিহাসে পারসীয়দের দুইটি বড় অবদান বর্ণনা কর

ফিনিশীয় সভ্যতা (The Phoenician Civilization)

=====================================

লেবানন পর্বত এবং ভূমধ্যসাগরের মাঝামাঝি এক ফালি সরু ভূমিতে ফিনিশীয় রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। কৃষিকাজ করার মত এখানে উর্বর জমি ছিলনা। তাদের আয়ের একমাত্র উৎস ছিল বাণিজ্য।

✍ফিনিশীয়দের অবদান: প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসে ফিনিশীয়দের পরিচয় শ্রেষ্ঠতম নাবিক ও জাহাজ নির্মাতা হিসাবে। ধ্রুবতারা (North Star) দেখে তারা দিক নির্ণয় করত। এ কারণে ধ্রুবতারা অনেকের কাছে ‘ফিনিশীয় তারা’ (Phonecian Star) নামে পরিচিত ছিল।

✍ সাংস্কৃতিক উন্নতি: সভ্যতার ইতিহাসে ফিনিশীয়দের সবচেয়ে বড় অবদান হল বর্ণমালা (Alphabet) এর উদ্ভাবন। তারা ২২ টি ব্যঞ্জনবর্ণের (Consonants) উদ্ভাবন করে। আধুনিক বর্ণমালার সূচনা হয় এখান থেকে। ফিনিশীয়দের উদ্ভাবিত বর্ণমালার সাথে পরবর্তীতে গ্রিকরা স্বরবর্ণ (Vowels) যােগ করে বর্ণমালাকে সম্পূর্ণ করে।

✍ কারিগরি দক্ষতা: ফিনিশীয়রা মাটির পাত্র তৈরি করতে পারত। দক্ষতার সাথে কাপড় তৈরি ও রং করতে পারত।

পারস্য সভ্যতা (The Persian Civilization)

==============================

আজকের ইরান প্রাচীনকালে পারস্য নামে পরিচিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দ থেকে ৬০০ অব্দের মধ্য এখানে আর্যরা এক উন্নত সভ্যতা গড়ে তােলে। এ সভ্যতার অধিবাসীরা সামরিক শক্তিতে খ্যাতিমান ছিল। সভ্যতার ইতিহাসে দুইটি ক্ষেত্রে পারসীয়দের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি সুষ্ঠ ও দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তােলা এবং দ্বিতীয়টি ধর্মীয় ক্ষেত্রে নতুন ধারণা নিয়ে আসা। জরথুষ্ট্র নামে পারস্যে এক ধর্মগুরু ও দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে। জরথুষ্ট্র কর্তৃক প্রবর্তিত ধর্ম ‘জরথুস্ট্রবাদ’ নামে পরিচিত। মৃতের সকারের জন্য চিলঘর ব্যবহার করে জোরােস্ট্রিয় বা জরথুস্ত্র ধর্মাবলম্বীরা। পারস্যের ইতিহাসে কাইরাস ও দারিয়ুস ছিলেন সবচেয়ে সফল শাসক। ৩০০ খ্রস্টপূর্বাব্দে গ্রিক বীর আলেকজান্ডার অধিকার করে নেন সমগ্র পারস্য সাম্রাজ্যকে।

হিব্রু সভ্যতা (The Hebrew Civilization)

=============================

প্যালেস্টাইনের জেরুজালেম নগরীকে কেন্দ্র করে গড়ে হিব্রু সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। হিব্রু কোন জাতির নাম নয়। হিব্রু একটি সেমাটিক ভাষা। এ ভাষায় কথা বলা লােকেরাই হিব্রু নামে পরিচিত। হিব্রুদের আদিবাস ছিল আরব মরুভূমিতে। বর্তমান ইসরাইলের অধিবাসীরা হিব্রুদের বংশধর। হিব্রুরা তাদের অবদানের পুরােটাই রেখেছে ধর্মীয় ক্ষেত্রে। হিব্রুরা সর্বপ্রথম একেশ্বরবাদের কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করে। অবশ্য অনেককাল পূর্বে মিশরের ফারাও ইখনাটন এক দেবতার আরাধনার আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা তেমন জনপ্রিয় হতে পারেনি। হিব্রুদের নবী হযর‍ত মুসা (আ.), হযরত দাউদ (আ.) এবং হযরত সুলায়মান (আ.) মানুষের প্রচলিত ধর্মীয় চেতনায় নতুন আলােড়ন তােলেন।

=====================================

সভ্যতার ইতিহাসে পারসীয়দের দুইটি বড় অবদান বর্ণনা কর

আজকের ইরান দেশটিকে প্রাচীনকালে পারস্য বলা হতো। আর্যজাতির যে শাখা ইরানের দক্ষিণে বসতি স্থাপন করে তারাই পারসিক। পারসিকদের প্রাণ কেন্দ্র ছিল ‘পারসিপলিস’। আর ইরানের উত্তর অংশে যারা বসতি স্থাপন করে তারা মিডীয় নামে পরিচিত ছিলো। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দে পারসীয়রা একটি সভ্যতা গড়ে তোলে। তাদের এই উন্নত সভ্যতাকে পারস্য সভ্যতা বলা হয়ে থাকে। পারস্য সাম্রাজ্যের অপর নাম একমেনিড সাম্রাজ্য।

পার্সিয়ান সাম্রাজ্য নামটি এসেছে কয়েকটি মিলিত রাজবংশ থেকে, যারা কয়েকশো বছর শাসন করেছে। তাদের শাসনামল টিকেছিলো খ্রিস্টপূর্ব ছয়শো অব্দ থেকে বারোশো খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। সাইরাস দ্য গ্রেট খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ অব্দে এই পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেছিলো। সেই সময় এটি পরিণত হয়েছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ সাম্রাজ্যের একটিতে। লৌহযুগের রাজবংশের এই সাম্রাজ্যটি আখেমেনীয় সাম্রাজ্য নামেও পরিচিত ছিলো। সেই সময়ে পারস্য ছিলো সংস্কৃতি, ধর্ম, বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও প্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্র। আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের আক্রমণের আগের ২০০ বছর পর্যন্ত এভাবেই টিকেছিলো আখেমেনীয় সাম্রাজ্যের সেই পারস্য।

সভ্যতার ইতিহাসে পারসীয়দের দুইটি বড় অবদান :

  • পার্সিয়ান সংস্কৃতি

আখেমেনীয় সাম্রাজ্যের প্রাচীন পার্সিয়ানরা বিভিন্ন প্রকারের শিল্পের সুচনা করেছিলো। এগুলোর মধ্যে ধাতুর কাজ, পাথর খোদাই, বুনন এবং স্থাপত্যশিল্প অন্যতম। ধীরে ধীরে পার্সিয়ান সাম্রাজ্য যতো বিস্তার লাভ করেছে তাদের শিল্পকলাও ততোটাই উন্নত হয়েছে। তারা যতো আদি সভ্যতা দখল করেছে, সেই সব সভ্যতার শিল্পগুলোও নিজেদের মতো করে গড়ে তুলেছে।

প্রাচীন পার্সিয়ানদের শিল্পের উল্লেখযোগ্য একটি হলো খাড়া বাঁধের বড়ো বড়ো পাথর খোদাই করা। নাকশ-ই-রুস্তমে অবস্থিত আখেমেনীয় রাজাদের প্রাচীন সমাধি মন্দিরে এগুলো এখনও পাওয়া যায়। প্রতিটি পাথরে অঙ্কিত রয়েছে অশ্বারোহী রাজা এবং যুদ্ধ বিজয়ের প্রতিকৃতি। প্রাচীন পার্সিয়ানরা তাদের ধাতব কাজের জন্যও বিখ্যাত ছিলো। ১৮৭০ সালে স্মাগলার কিছু স্বর্ণ ও রৌপ্যের তৈরি আর্টিফ্যাক্ট খুঁজে পেয়েছিলো বর্তমান তাজিকিস্তানের অক্সাস নদী কাছে। আর্টিফ্যাক্টগুলোর মধ্যে রয়েছে কিছু ছোটো ছোটো সোনালি অশ্বরথ, মুদ্রা এবং গ্রীফনের প্যাটার্নে সজ্জিত কিছু ব্রেসলেট। (গ্রীফন পাখাওয়ালা একটি পৌরাণিক প্রাণী যেটির মাথা ঈগলের এবং শরীর ছিলো সিংহের। এটি পার্সিয়ান রাজধানী পার্সেপোলিসের প্রতীক ছিলো।)

  • পারসীয়দের বিজ্ঞানচর্চা, স্থাপত্যকলা ও লিপি

জ্ঞান বিজ্ঞানেও পারসিকরা যথেষ্ট অবদান রেখেছে। মহান শাসক দারিয়ুস মিসরীয় রীতি অনুসারে পারসিকদের জন্য পঞ্জিকা তৈরি করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান উন্নয়নের জন্য তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তিনি মিসরীয় চিকিৎসালয়ের সংস্কার এবং বিশিষ্ট ক্যালডীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী নেবুরিমানু ও ফিদিনুকে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। শিল্পকলাতে পারসিকরা তেমন কোন সক্ষমতা না দেখালেও সম্রাট সাইরাস ও দারিয়ুসের প্রাসাদ নির্মাণে এবং সাইরাসের সমাধিসৌধ তৈরিতে পারসিকরা উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছে। পারস্য স্থাপত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন কাইরাসের সমাধি।পারসিকরা প্রথম দিকে কিউনিফর্ম লিপিতে লিখতো এবং লেখার কাজে উনচল্লিশটি কিউনিফর্ম চিহ্ন ব্যবহার করতো। পরবর্তীতে তারা নিজস্ব লিখন রীতিও প্রচলন করে। পারস্য সভ্যতার লিখন পদ্ধতিতে ভাষার প্রচলন ছিল ২ টি।