ইসলামের সাথে ইমানের সম্পর্ক খুবই নিবিড়” কথাটি ব্যাখ্যা কর।

ইমানের শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস, স্বীকার, আস্থা, মান্য, কৃতজ্ঞ। মুমিন হওয়ার মূল শর্ত হলো ইমান আনা। আর ইমানের তিনটি দিক থাকে। তা হলো : অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং আমল করা। আর এই তিনটি দিক সরাসরি ইসলামের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ইসলাম শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো বশ্যতা, সমর্পণ, আত্মসমর্পণ, অনুগত করা।

ইমানের ৭টি স্তরের প্রথম স্তরটি হলো আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ইমান আনা। তিনি আমাদের রব, বিচার দিনের মালিক, সর্ব ক্ষমতার অধিকারী, ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। আল্লাহর যে ৯৯ টি গুণবাচক নাম রয়েছে সবগুলোর উপর ইমান আনতে হবে। এই ইমান অন্তর থেকে আনতে হবে। মোট কথা নিজেকে, নিজের সব ইচ্ছাকে আল্লাহর নিকট সমর্পন করা নামই হলো ইমান। এবং তা ইমানের তিনটি দিক দিয়ে আমাদের অনুধাবন করতে হবে।

ইমানের দ্বিতীয় স্তরটি হলো ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস করা। ফেরেশতাগণ নূরের তৈরি এবং অদৃশ্য। তারা পুরুষ নন নারীও নন। তারা সর্বদা আল্লাহর হুকুম মেনে চলছেন। এসবকিছুই ইমানের তিনটি দিক দিয়ে বিশ্বাস করতে হবে।

ইমানের তৃতীয় স্তরটি হলো আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস করা। মানবজাতির কল্যাণের জন্য আল্লাহ প্রত্যেক নবীদের উপর কিতাব নাজিল করেছেন। মহান আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি শুরু হয়েছিল এই কিতাবসমূহের মাধ্যমে যাকে বলা হয় আসমানি কিতাব। সর্বমোট আসমানি কিতাব ১০৪ টি। এরমধ্যে ১০০ টি ছোট আর বাকি ৪টি বড় কিতাব। এগুলো হলো – তাওরাত, যাবুর, ইনজিল ও কুরআন। কুরআন হলো সর্বশেষ কিতাব এবং গোটা মানবজাতির জন্য পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান।

ইমানের চতুর্থ স্তরটি হলো নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস করা। মানজাতির হিদায়েত ও কল্যাণের জন্য আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। মূলত নবি-রাসুলগণ ছিলাম আমাদের পথনির্দেশক। তারা মানুষদেরকে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিতেন, কল্যাণের পথে আহ্বান করতেন। সর্বপ্রথম নবি ছিলেন হযরত আদম (আ.) এবং সর্বশেষ নবি ও রাসুল ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (স.) আমরা হলাম শেষ নবির উম্মত। মহান আল্লাহ দুনিয়া মধ্য থেকেই নবি-রাসুলদের নির্বাচন করেছেন। এবং প্রত্যেক নবি ছিলেন পুরুষ এবং বিবাহিত।

পঞ্চম স্তরটি হলো আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস করা। আখিরাত হল পরকাল। যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। মূলত আখিরাতের জীবন শুরু হয় মানুষের ইন্তেকালের পর থেকেই। পরকালের যাত্রা শুরু হয় ধাপে ধাপে। যেমনঃ মৃত্যু, কবর, কিয়ামত, হাশর, মিযান, সিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম।

ইমানের ষষ্ঠ স্তরটি হলো তকদিরে বিশ্বাস করা। তকদির মানে হলো ভাগ্য। যা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষের সাথে যা যা হয় সবই আল্লাহর হুকুমে। তাই একজন মুমিনের উচিত ভালো খারাপ যাই ঘটুক হতাশ না হয়ে সর্বদা আল্লাহ্‌র শুকরিয়া করা।

শেষ ও সপ্তম স্তরটি হলো মৃত্যুর পর পুনুরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস করা। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আছে আল্লাহ সবাইকে পুনরায় জীবিত করা হবে। আমাদের সকল কাজের হিসাব দিতে হবে। আল্লাহ খুব সূক্ষ ও দ্রুত হিসাব নিতে সক্ষম।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
ইমান হলো- “তুমি বিশ্বাস করবে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাব সমূহের প্রতি, তাঁর রাসুলগনে প্রতি ও শেষ দিবসের (আখিরাতে) প্রতি এবং ভাগ্যের (তকদিরে) ভাল মন্দের প্রতি বিশ্বাস করবে”। [মুসলিম শরীফ হাদীস নং-১, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত]

আল্লাহ কুরআনে বলেন

“আর যে আল্লাহকে ও তাঁর ফেরেশতাদেরকে ও তাঁর কিতাবসমূহকে ও তাঁররাসুলগণকে এবং শেষ দিবসকে অস্বীকার করবে, সে বহুদুরে পথভ্রষ্ঠতায় পথভ্রষ্ট হয়েছে”। আন-নিসা, ৪/১৩৬

যদি ইসলাম ও ইমান দু‘টি শব্দ একত্রে উল্লেখ করা হয় তবে ইসলাম শব্দের উদ্দেশ্য হলো: বাহ্যিক কার্যাদি তা হলো পাঁচটি রোকন আর ঈমান শব্দের উদ্দেশ্য গোপনীয় কার্যাদি তা হলো সাতটি রোকন। আর যখন ভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা হবে তখন একটি অপরটির অর্থে ও বিধানে শামিল হবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলাম হলো বাহ্যিক আর ইমান হলো অন্তরের বিষয়। (ইমাম আহমেদ থেকে বর্নিত)

ইমান ও আমল, এ দুয়ের সমন্বয়ই হচ্ছে ইসলাম। ইমান হল অন্তরের আমলের নাম। আর ইসলাম হল বাহ্যিক আমলের নাম। যে ইমান বা বিশ্বাস করে সে মুমিন। যে বাহ্যিক আমলগুলি করে সে মুসলিম। আমাদের উভয় আমল করতে হবে।

আরও দেখুন…